Saturday, July 30, 2022

মৃত্যু উপত্যকায় হেঁটে চলেছি আমি জীবনের খোঁজে!

মৃত্যু উপত্যকায় হেঁটে চলেছি আমি

জীবনের খোঁজে!


হীরা মানিক জহরতের প্রত্যাশী আমি

হাতরে বেড়াচ্ছি সব ঝলসানো কাঁচ!


নরম দূর্বা ঘাস দিয়ে বানিয়ে চলছি

চির আরামের ফোলানো ফাঁপানো জাজিমের বিছানা

লতানো গাছের গুঁড়ি ফেলে উন্মত্তের মতো অবরোধ করে চলেছি

অবধারিত গন্তব্যের পথতৈরি করি সুরক্ষিত ব্যারিকেড।

এই আশায়,

যদিবা গতিরোধ করা যায় জীবনের যাত্রাপথের!

বাড়িয়ে তোলা যায় যদি আমার এই বিলাসী জীবনের দৈর্ঘ্য।


অনন্তর মাপজোক করে দেখি আরেকটু এগোলাম কিনা!

পাশের জনের থেকে পিছিয়ে পড়ার এক অদ্ভুত ভয়ে।

আরেকটু এগোতে পারলেই যেন পৌঁছে যাবো মরিচিকাময় মরুদ্যানে-

মরুভূমির তপ্ত বালি পেছনে ফেলে!

সেই টানে - দৌড়ে হেঁচড়ে ছুটে চলেছি এই নশ্বর দেহটাকে

এতটুকু অবকাশ না দিয়ে।


প্রতি বছর খুলে চলছি নতুন নতুন হালখাতার

জমাখরচের পুরনো খতিয়ান অসম্পূর্ণ রেখেই।

বিনিয়োগ বাড়িয়েই চলছি জীবনের চাওয়া না-চাওয়ার খাতগুলোতে

উন্নয়নের-অপচয়ের বাজেট ঘাটতির বাছবিচার না করেই।


পাওয়া না-পাওয়ার প্রতিনিয়ত হিসেবে হার মানিয়ছি হিসাববিজ্ঞানের ঝানু কেরানিকেও

তারপরও ব্যতিব্যস্ত থাকি হিস্টরিয়া রোগীর মতো-

একটা কিছু না পাওয়ার অবাধ্য আকাঙ্ক্ষায়!


কাকে কী দিয়ে দিলামকে কী নিয়ে গেলো আর কীইবা রেখে যাবো

এই ভাবনায় সারাদিন অশান্ত এই মন।

কী নিয়ে এসেছিলাম কী নিয়ে যাবো

সেই চিন্তা করার ফুরসত কই?


ফজরের প্রত্যুষ উদ্ভাসিত আলোয় প্রতারিত হয়ে ভূলে থাকি গোধূলির লালিমা

সূর্যাস্তক্ষনে জেগে উঠে খুঁজি আলোর রসদ

অন্ধকারের বাস্তবতায় আলোকিত হয়ে মুছে ফেলি সব সন্দেহ - অবিশ্বাসের জবানবন্দী।

ক্ষনিকের ওই বিলাসী উদ্দাম জীবন তখন মনে হয় এক আজন্ম শত্রু

ফিরে যেতে চাই শোধরাবো বলে - ঘুরে দাঁড়াতেই আটকে যাই আমারই তৈরি করা ব্যারিকেডে!

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হারিয়ে যাই অন্ধকারের অতল গহ্বরে!

ভয়ার্ত আমি ভাবি-"খুব দেরি হয়ে গেল নাকি?"


Monday, July 18, 2022

ডাহা মিথ্যা কথা!

“তিনি আরও বলেন, ‘যাদের অর্থের অভাব নেই, তারাও কিন্তু লোডশেডিং করছে। যুক্তরাজ্যে হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ায় হচ্ছে।…”

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের জন্য পুরো বিশ্বের রাজনীতি ও অর্থনীতি এখন টালমাটাল। কৃচ্ছতা সাধন করা অবশ্যই জরুরি। আশা করছি এবং তার সাথে দোয়াও করি যাতে বাংলাদেশ সহ অন্যান্য সব দেশই যাতে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে। আমি অন্য একটা ব্যাপারে একটু বলতে চাই।

আমি মাঝে মধ্যেই পত্রিকায় অথবা মানুষের মুখে এই ধরনের মন্তব্য শুনি যে "ঢাকার এমন যানজট নিউইয়র্ক- ক্যালিফোর্নিয়াতেও হয়", "এই একটু-আকটু দূর্নীতি ইউরোপ আমেরিকাতেও হয়", "এই ধরনের খুন-খারাবি আমেরিকাতে আরো বেশি হয়", "অল্প-বিস্তর দারিদ্র্যতা আর মানুষের ভোগান্তি ইউরোপ আমেরিকাতও দেখা যায়", "রাজনীতিকদের এমন ধারণের কথা বার্তা বাংলাদেশ-আমেরিকা সবজায়গাতেই একরকম", ইত্যাদি ইত্যাদি।

আলহামদুলিল্লাহ, আমার বাংলাদেশ আমেরিকা দুই জায়গাতেই থাকার সৌভাগ্য হয়েছে। বাংলাদেশ দিনে-রাতে বারবার লোডশেডিং দেখার ভাগ্য হয়েছে (মাঝেমধ্যে আমার অবশ্য রাতের লোডশেডিং ভালোই লাগত- লেখা পড়া বন্ধ করে অন্ধকারে বসে ভায়োলিনের যে দুই একটা সুর জানতাম সেটাই নির্ভয়ে বাজাতে পারতাম - কারন কেউ খুঁজে পাবেনা কোন বাসা থেকে এই অত্যাচার আসছে সেই ভরসায়😃)। আমেরিকাতেও একবার যানজটের কারণে ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট মিস করেছি। বাংলাদেশে ছিনতাই এর ভয়ে রাস্তায় রাতের বেলায় তটস্থ থাকতাম। মাঝেমধ্যে আমারিকায়ও ম্যাস শুটিং (নির্বিচার গুলিবর্ষণ) এর উৎকণ্ঠায় থাকি পত্রিকায় অথবা টিভিতে খবর দেখে। আমেরিকার দুর্নীতি-অন্যায় ও দেখি - কখনো নিজের চোখে আর কখনোবা পত্রিকার পাতায়। চরম দারিদ্র্যতা দেখেছি বাংলাদেশে - আমার আশেপাশে এমনকি আমাদের নিজেদের ঘরেও। আর এখন আমেরিকাতেও দারিদ্র্যতা দেখি আমার আশেপাশে, টিভিতে-পত্র পত্রিকাতে।

ভালো খারাপ সব জায়গাতেই আছে থাকবে। আমার মধ্যে একটা মজ্জাগত স্বভাব হলো সবকিছু "অবজার্ভ" করা আর এগুলোর তুলনামূলক অবস্থান "কম্পেয়ার-কনট্রাস্ট" করা। আমি চাইলেও এটা না করে থাকতে পারিনা।

অনেক ডাটা-তথ্য-উপাত্ত সহকারে দেখাতে পারি যেটা একটু ঘাটাঘাটি করলে আমি-আপনি যেকেউ খুব সহজেই খুঁজে পেতে পারি। বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি। আমার জন্ম। আমার স্বপ্ন। তাই বাংলাদেশের প্রতি কিছুটা পক্ষপাত (“ইম্প্লিসিট বায়াজ") থাকবেই। আমি এখনো স্বপ্ন দেখি একদিনের যেদিন বাংলাদেশ আরো উন্নত হবে কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে এইটুকু অনায়াসে বলতে পারি যে ওই কথাগুলো যেগুলো আমাদের-বাংলাদেশীদের শোনানো হয় সান্ত্বনা দেয়ার জন্য যে এই যানজট, লোডশেডিং, দারিদ্র্যতা, অন্যায়-দুর্নীতি, খূন-রাহাজানি ইউরোপ-আমেরিকার সাথে তুলনা করা যায়- ওই কথাগুলো সব....................ডাহা মিথ্যা কথা!