নীচের ভুয়া খবরের কথা কি মনে আছে? ধর্ম প্রীয় মানুষের রাগ উস্কে দিতে আসল শিরোনামটি মুছে দিয়ে বসানো হয়েছিল একটা মিথ্যা শিরোনাম। আসল ছবিটি ছিল ভূমিকম্পের আগে একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং ভেঙে পড়ার পুরনো একটা ছবি যেটাকে থিয়েটার হিসেবে গুজব ছড়ানো হয়েছিল। শুধু একটি ছোট গুগল ইমেজ সার্চ করেই এই ভুয়া খবরটা ধরে ফেলা যায়। কিন্তু আমাদের সার্চ করার এত সময় কই? কে কার আগে আমরা অন্যদের সাথে শেয়ার করবো তার জন্য আমরা সবাই খুবই ব্যতিব্যস্ত।
যুগ যুগ ধরে মানুষ যেমন তথ্য ব্যবহার করে আসছে - সেই সময়ের মত করে - তেমনিই বিশেষ গোষ্ঠী ও জাতি তার নিজের সুবিধার জন্য এর অনেক অপব্যবহারও করে আসছে। তবে ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া এবং স্মার্টফোনের সর্বজনীনতা অতীতের তুলনায় এটিকে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ করেছে। এই প্রযুক্তিগুলি প্রতিটি মানুষকে এক একটি "নিউজ আউটলেট" বানিয়েছে এবং একটি বোতাম বা স্পর্শের সাহায্যে আমরা পৃথিবী জুড়ে হাজার হাজার এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারি। যেহেতু এই ক্ষমতা আমাদের হাতে এসে গেছে তাই তার জন্য আমাদেরকে অনেক বেশী দায়িত্বশীলও হতে হবে। ক্লিক করার আগে আপনাকে এর সত্যতা যাচাই করতে হবে। এখন, প্রশ্ন হল আপনি এটা কিভাবে করবেন? প্রযুক্তির যেমন তথ্যের ছড়ানোকে সহজ করছে তেমনি তথ্যের সত্যতা যাচাই করাও এখন খুবই সহজ হয়ে গেছে। এখনকার প্রযুক্তি ব্যবহার করেই এর সত্যতা নিমেষেই যাচাই করা যাবে। সামনে হয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি আসবে ভবিষ্যতে প্রযুক্তি র কিন্তু মৌলিক বিষয়গুলো একই থাকবে। এখন দেখা যাক কি ঘরে বসেই এটা অতি সহজে করা যাবে:
- বিষয়টির প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করুন। যদি আপনার জ্ঞানের একমাত্র উৎস সেকেন্ড হ্যান্ড প্রসেসড ইনফরমেশন হয়, তাহলে আপনি ভুল তথ্যের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল। এটি তাজা খাবার খাওয়ার পরিবর্তে খুব বেশি প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার মতো আপনার স্বাস্থ্য সমস্যা এবং রোগের সম্ভাবনা বাড়ায়। মৌলিক জ্ঞ্যান অর্জন করুন- যেমন ভূগোল, ইতিহাস, অর্থনীতি, সামাজিক বিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, গনিত, রসায়ন, চিকিৎসা, ধর্মীয় গ্রন্থ, ইত্যাদি।
- তথ্য যাচাই করার জন্য কমপক্ষে তিনটি উৎস রাখুন (আরও বেশি হলে আরো ভাল কিন্তু তিনটির নিচে যাবেন না)। প্রথমে আপনার উৎস স্থাপন করুন এবং তারপর এটি যাচাই করার জন্য "ট্রায়াঙ্গুলেশন" বা “ত্রিভুজীকরণ” কৌশল ব্যবহার করুন। উৎস নির্ধারণ করার সময়, নিশ্চিত করুন যে সেগুলি ডাইভার্সিফাইড উৎস থেকে যাচাই বাছাই করা হয়েছে ( তার মানে- এক উৎস আরেক উৎসের তথ্য ব্যবহার করছে না। যেমন স্বাস্থ্য তথ্য যাচাই করার জন্য নিরপেক্ষ উৎস (যেমন www.wikipedia.org), আমেরিকান উৎস (www.cdc.gov), আন্তর্জাতিক উৎস (www.who.int), কিছু এশিয়ান/আফ্রিকান/ইউরোপীয় উৎস ব্যবহার করুন।অবশেষে জীববিজ্ঞান এবং চিকিৎসাশাস্ত্রের মৌলিক বিষয়গুলি থেকে আপনার গবেষণা ব্যবহার করুন। যদি আপনি এটা করতে না পারেন, তাহলে অন্যদের মধ্যে সেই তথ্যগুলি শেয়ার করে দয়া করে অন্যের ক্ষতি করবেন না।
সংক্ষেপে আবার বলছি:
আপনি তথ্য প্রকাশ করার আগে ভালো করে চিন্তা করুন।
শেয়ার করার আগে যাচাই করুন।
একটু অপেক্ষা করুন।
অতপর চিন্তা শেষ করার পরেই শুধু মাত্র শেয়ার করুন।
মনে রাখবেন: সর্বদা "ট্রায়াঙ্গুলেশন" বা “ত্রিভুজীকরণ” কৌশল ব্যবহার করে, তথ্যের নির্ভরযোগ্য উৎস ব্যবহার করে ভালো করে যাচাই করুন। পরে যেন নিজের কৃতকর্মের জন্যে নিজেই অনুতপ্ত না হই, অনিচ্ছাকৃত ভাবে যেন কারো ক্ষতি না করি, নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে অন্যের কাছে ছোট ও হাস্যকর না বানাই।
সুরা আল-হুজুরাতে মুসলমানদের জন্য কিভাবে সামাজিক জীবনকে পরিচালিত করতে হয় তার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে- অন্যের উপর গুপ্তচরবৃত্তি না করা, উপহাস ও খারাপ নামে না ডাকা, অথবা সম্ভাব্য কারণ ছাড়া অনুমান না করার কথা বলা আছে। সেখানে খুবই কঠোর ভাবে গীবত করার ক্ষতিও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যাই হোক, আমরা অনেকেই তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যে নতুন সামাজিক যোগাযোগের প্ল্যাটফর্মটি পেয়েছি, তা আমাদের বাস্তব জীবনের সাথে খাপ খাওয়াতে পারিনি। মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব আরো বেশি- বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে এই তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে।
যদিও এটি যেকোনো মাধ্যমের জন্য সত্য কিন্তু যেহেতু প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলি এখনো অনেকর জন্য নতুন এবং এর থেকে ক্ষতির সম্ভাবনাও অনেক বেশী, তাই আমরা যখন তথ্য ব্যবহার করব তখন আমাদেরকে দ্বিগুণ সতর্ক থাকতে হবে। এটা শুধু উচিত বললে ভুল বলা হবে, এটা আমাদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।কারনঃ আল্লাহ তায়ালা বলেন:
يَـٰٓأَيُّہَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِن جَآءَكُمۡ فَاسِقُۢ بِنَبَإٍ۬ فَتَبَيَّنُوٓاْ أَن تُصِيبُواْ قَوۡمَۢا بِجَهَـٰلَةٍ۬ فَتُصۡبِحُواْ عَلَىٰ مَا فَعَلۡتُمۡ نَـٰدِمِينَ
“মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও। " সূরা হুজুরাত (৪৯:৬)
إِذۡ تَلَقَّوۡنَهُ ۥ بِأَلۡسِنَتِكُمۡ وَتَقُولُونَ بِأَفۡوَاهِكُم مَّا لَيۡسَ لَكُم بِهِۦ عِلۡمٌ۬ وَتَحۡسَبُونَهُ ۥ هَيِّنً۬ا وَهُوَ عِندَ ٱللَّهِ عَظِيمٌ۬
“যখন তোমরা একে মুখে মুখে ছড়াচ্ছিলে এবং মুখে এমন বিষয় উচ্চারণ করছিলে, যার কোন জ্ঞান তোমাদের ছিল না। তোমরা একে তুচ্ছ মনে করছিলে, অথচ এটা আল্লাহর কাছে গুরুতর ব্যাপার ছিল। "সূরা নূর (২৪:১৫)
https://thinksimplealways.blogspot.com/2021/10/learn-how-to-handle-information-wisely.html
No comments:
Post a Comment