এই সপ্তাহটা খুবই অদ্ভুত ভাবে শুরু হয়েছিল।
শরীরটা খারাপ লাগতেছিল গত সপ্তাহ থেকেই। যাবো যাবো করে ডাক্তারের কাছে যাওয়া হচ্ছিল না। মঙ্গল বার অফিস থেকে আমার প্রাথমিক চিকিৎসক এর অফিসে ফোন করার পর ওরা আমাকে একটু ভয়ই পাইয়ে দিল। এখনই আসতে হবে। অনেক বুঝিয়ে দুপুরের পর আসার ব্যবস্থা করলাম।
এর আগের শুক্রবার, রাদিয়াহর, আমার ভাগ্নী, শরীর এতটাই খারাপ হয়ে গেছিল যে ওকে ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে নিতে হয়েছিল। তাই ওকে দেখতে শনিবার সকালে ৫ ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে নিউইয়র্কে যেয়ে আবার রাতেই ফিরে এসেছিলাম। ফিরতে অবশ্য ৭ ঘন্টার বেশি লেগে গিয়েছিল। প্রচন্ড তুষার এর মধ্যে পরে গেছিলাম। এক শরীর এ একদিনে ১২ ঘন্টার উপর গাড়ি চালানোটা মনে হয় ভুলই হয়েছিল।
যাই হোক, অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে আড়াইটার দিকে ডাক্তারের ওখানে পৌঁছালাম। আমার প্রাথমিক চিকিৎসক সেদিন ছুটিতে ছিল। অন্য একজন আমাকে দেখতে এল। আমার কথা শুনে বল্ল, তোমাকে এখনি হসপিটালের ইমার্জেন্সি রুম (ই. আর.) এ যেতে হবে। তাও আবার এম্বুলেন্সে করে! ই. আর. এ যেতে আমার সমস্যা নাই কিন্তু এই ডাক্তারের কথা বার্তা আমার কোনো এক কারনে পছন্দ হচ্ছিল না। লং স্টোরি শর্ট, আমি সরাসরিই বল্লাম যে, ওনার কথায় আমি সাচ্ছ্বন্দ বোধ করছিনা এবং অন্য একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলতে চাই। আরেকজন ডাক্তার এলেন। এইজন বেশ সুন্দর করে কথা বল্লেন। সিম্পটম দেখে উনিও আমাকে এম্বুলেন্স ছাড়া যেতে দিবেন না। অনেক বোঝানোর পর আমাকে ড্রাইভ করতে দিতে রাজী হলেন। এর আগে অবশ্য ৪ টা এসপিরিন খেতে দিলেন। তারপর আমি বাসায় এসে সালমাকে নিয়ে সোজা বেথ ইসরাইল হসপিটালের ই. আর. এ চলে এলাম। এতো গুলো কথা যে জন্য বলা এখন সেই কথায় আসি।
এই দেশের ইমারজেন্সি ৯১১ সেবার কথা কয়েক বছর আগের একটা পোস্ট এ লিখেছিলাম। আজকে লিখবো এদেশের হসপিটালের ইমার্জেন্সি রুম বা ই. আর. সেবার কথা। ছোট ছোট কয়েকটা এনেকডোটাল কাহিনীর মধ্যে দিয়ে বলার চেষ্টা করব।
- ই. আর এ পৌঁছাতেই আমাকে সাথে সাথে নিয়ে গেল
ট্রিয়ায রুমে। কয়েক মিনিটের মধ্য ই. কে. জি. করে ৫ কি ৬ সিরিঞ্জ রক্ত নিলো বিভিন্ন টেস্ট এর জন্য।
- যেহেতু এটা লাইফ থ্রেটেনিং না তাই আমাকে অপেক্ষার রুমে বসে থাকতে হলো যতক্ষণনা আমার সিরিয়াল আসে। ওখানে বসেছিলাম প্রায় ২ ঘন্টার মতো।
- একটা সাইনবোর্ড পোস্টারে বড় বড় করে লিখা: এই হাসপাতাল প্রত্যেক রোগীকে চিকিৎসা দিতে আইনগত ভাবে বাধ্য থাকবে এবং হাসপাতালের সবরকম সুযোগসুবিধার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে চিকিৎসার ব্যবস্হা করবে। রোগীদের সাস্হ্য ইনশিওরেন্স অথবা নগদ টাকা থাকুক বা নাই থাকুক।
- রোগীদের মধ্যে সবধরনের মানুষই দেখলাম। ধণী দরিদ্র, কালো সাদা, অল্প অসুস্হ থেকে বেশী অসুস্হ, বাচ্চা থেকে বুড়ো। সবাই চুপচাপ অপেক্ষা করছিলো তাদের সিরিয়াল আসার জন্য।
- একজন খুবি বৃদ্ধ এক মহিলা ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিলো। তার সাথে ছিলো তার মেয়ে আর মেয়ের জামাই। বৃদ্ধ মহিলা বারবার তার মেয়েকে বলছিলো যাতে সে অফিসে তাড়া দেয়। মেয়ে মাকে বোঝাচ্ছিলো যে তাঁর সিরিয়াল আসলে তারপরই তারা ডাকবে, আগে যেয়ে কোনো লাভ হবে না।
- যখন আমার ডাক আসলো, ততক্ষণে প্রায় রাত ৯ টা। নার্স প্রেকটিশনার আমার ভাইটাল চেক করলো। অসুস্হতার বৃত্তান্ত নিলো। শরীরে হার্ট আর অক্সিজেন মনিটর লাগিয়ে দিলো।যাওয়ার সময় বলে গেল ডাক্তার যেকোনো সময় চলে আসবে।
- ডাক্তার এসে আমার রক্ত পরীক্ষার ফলাফল জানালো আর বল্লো এরপর তারা কি করবে। আমাকে আরো এক দুই ঘন্টা থাকতে হবে, আরো কয়েকটা টেস্ট করতে হবে।
- অপেক্ষা করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সেই নার্স একসময় এসে বল্লো যে পরীক্ষার ফলাফল আসতে আরো খানিকটা সময় লাগবে, ফ্রীজে খাবার আছে, আমি যদি খেতে চাই।
- অবশেষে রাত ১১ টার দিকে ডাক্তার ফাইনাল রেজাল্ট নিয়ে আসল। আলহামদুলিল্লাহ। খারাপ কিছু না। আমাকে একটা ঔষধ প্রেসক্রাইব করলো আর বল্লো একদিন বাসায় রেস্ট নিতে।
বাসায় আসতে আসতে ভাবছিলাম - এই যে এতোগুলো সেবা এরা আমাকে দিলো - এর সবটাই এই হসপিটাল আমাকে দিতে বাধ্য থাকতো আমার যদি ইনশিওরেন্স নাও থাকতো অথবা আমার কাছে নগদ এক ডলারও না থাকতো। এরা একজন নাগরিক কে বাঁচিয়ে রাখতে সর্বোচ্চ চেস্টা চালাতো। এই চাওয়াটা কি একটা সভ্য দেশের নাগরিকের জন্য খুব বেশী একটা চাওয়া!
No comments:
Post a Comment