Sunday, November 13, 2022

সোশ্যাল মিডিয়াকে কিভাবে বশে আনবেন?


আমি যদি বলি আপনি যে সোশ্যাল মিডিয়াই ব্যবহার করেন না কেনো, এর কোনোটাই ফ্রী না, তাহলে কি সেটা বিশ্বাস করবেন? যদি না করেন অথবা আপনি যদি না জানেন যে আসলে কিসের বিনিময়ে আপনি এগুলো ব্যবহার করছেন, তাহলে পরের লিখাটা একটু কষ্ট করে পড়ুন।

এটা অনস্বীকার্য যে সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের বর্তমান জীবনের এক ‌অপরিহার্য অংশ। এর মাধ্যমে আমরা মুহুর্তেই যেন পৌছে যাই বিশ্বজুড়ে আমাদের সকল আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার-পরিজনের কাছে। Facebook, Instagram, TikTok, Snapchat, WhatsApp, YouTube, LinkedIn, Pinterest— আরো কতশত প্লাটফর্ম! এগুলোর মাধ্যমে আমরা কথা বলছি, তথ্য ও ছবি আদান-প্রদান, যোগাযোগ রক্ষা ইত্যাদি নিত্যদিনের অবশ্য প্রয়োজনিয় কাজ গুলো সহজে করতে পারছি। আপাতদৃষ্টিতে এরজন্য আমাদের তেমন অর্থও ব্যয় করতে হচ্ছে না। মানব ইতিহাসে আমরা কখনো এত সহজে পুরো পৃথিবীজুড়ে সংযুক্ত হইনি। যেকোনো সময় আমরা বিশ্বজুড়ে আমাদের পরিবার এবং বন্ধুদের কাছে পৌঁছাতে পারি। আমরা অন্যদের সাথে আমাদের চিন্তা এবং জ্ঞান শেয়ার করতে পারি। সমস্ত জ্ঞান এবং বিজ্ঞান এখন আমাদের হাতের মুঠোয় যা অতীত মানব ইতিহাসে অচিন্তনীয় ছিল। আমরা বিশ্বের সমস্ত শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারগুলো দেখতে পারি অথবা তাদের লাইভ ক্লাসে যোগ দিতে পারি- পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে। এই প্রযুক্তিগুলি প্রত্যেকটা মানুষকে একেকটা "সংবাদ আউটলেট" করে তুলেছে। এখন আমরা যেনো প্রত্যেকেই এক-একজন লাইভ ব্রডকাস্টার। এতো শত সুবিধা বিবেচনায় ‌অবশ্যই সোশ্যাল মিডিয়া আধুনিক যুগের জন্য আশির্বাদ।

কিন্তু এই আশির্বাদের কি কোন ক্ষতিকর দিক নাই? প্রায় বিনা খরচে পাওয়া এই আশির্বাদের মূল্য চুকাতে আমাদের অজান্তেই মুল্যবান কিছু হারাতে হচ্ছে না তো? ইংরেজীতে একটা প্রবাদ আছে, ”there is no such thing as free lunch!” সোজা বাংলায় যার অর্থ করা যায় , “বিনামুল্যের জিনিষ বলে আসলে কিছু নাই!” বাহ্যিক এই বিনামূল্যের সোশ্যাল মিডিয়ারও তেমনি ক্ষতিকর বিভিন্ন দিক আছে। যেহেতু বর্তমান যুগে সামাজিক যোগাযোগের এইসব মাধ্যমকে এড়িয়ে চলা প্রায় অসম্ভব, তাই আমাদের সবার উচিৎ সোশ্যাল মিডিয়ার আদ্যপান্ত ভালোমতো বোঝা, এর ক্ষতিকর ও উপকারি বৈশিষ্ঠ্যগুলো জানা এবং এর ক্ষতি থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে বিচক্ষনতার সাথে সোশ্যাল মিডিয়াকে নিজেদের উপকারে ব্যবহার করতে শেখা।

সোশ্যাল মিডিয়ার আদ্যপান্ত বোঝার জন্য আমাদের বুঝতে হবে এর অন্তর্নিহিত ব্যবসায়িক কাঠামোকে। সোশ্যাল মিডিয়া কাজ করে “ attention economy“ অর্থাৎ “মনোযোগ অর্থনীতি” কাঠামোর উপর ভিত্তি করে। আমরা এই প্লাটফর্মগুলোর আমাদের “মনোযোগ” দিয়ে সেই মূল্য চুকাই। এই মডেলের অন্য একটা অংশ হলো “connectedness”, অর্থাৎ “সংযুক্ততা”। এই সংযুক্ততা যতো বৃদ্ধি পায়, সোশ্যাল মিডিয়ার attention economy এর ভিত্তি ততো মজবুত হয়। অন্যভাবে বললে- আমাদের “ মনোযোগ” এবং “সংযুক্ততা“-ই হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া নামক দানবগুলোর প্রধান খাদ্য। "মনোযোগ" বৃদ্ধির সাথে সাথে গ্রাহকের "সংযুক্ততা" যত বৃদ্ধি পাবে, বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে সেই ব্যবসার চাহিদাও ততো বৃদ্ধি পাবে।
মনোযোগ আকর্শনের জন্য বিশেষভাবে তৈরি ওদের সুক্ষ Artificial Intelligence বা এ.আই.অ্যালগরিদমের ফাঁদ এড়ানো খুবই কঠিন। এই অ্যালগরিদম গুলো দিয়ে প্রথমে গ্রাহককে বিভিন্ন তথ্য ও সুবিধা সম্বলিত মরীচিকার বলয় তৈরি করে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তাদের দেখানো যে কোন তথ্য ও সুবিধাগুলোকে এর ব্যবহারকারীরা অবশ্য-প্রয়োজনীয় বলে ভাবতে শুরু করে।
আমরা তাহলে কী করে এই সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে বাঁচবো? যে কোন সমস্যা সমাধানের প্রথম ধাপ হচ্ছে সমস্যাটাকে সঠিক ভাবে চিহ্নিত করা। কিছু লক্ষণ দিয়ে আমরা এটা পরীক্ষা করতে পারি যে আমরা কি সোশ্যাল মিডিয়ার attention economic মডেলের শিকার কি না। যেমন—
  • আমাদের অ্যাপ্লিকেশনের নোটিফিকেশন সবসময় চালু করা থাকে এবং একটু "টুং" করলেই সাথে সাথেই ফোন দেখা শুরু করি।
  • সকালে প্রথম যে জিনিসটি মনে আসে তা হলো আমাদের পোস্টে কয়টা লাইক-কমেন্ট পড়ল।
  • সকালের নাস্তায়, দুপুরের খাবারে বা রাতের খাবারে - দিনের পর দিন যা খাচ্ছি তা সবাইকে "দেখানোর" তীব্র আকাঙ্ক্ষা অনুভব করি।
  • অবকাশযাপনের "অসাধারণ" সব ছবি, "আশ্চর্যজনক" সব খাবার আর ভ্রমণের "অন্যজাগতীয়" সব ছবিগুলো পোস্ট করতে আমরা ছুটি থেকে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারি না।
  • অ্যাপের ভিডিও ফিড অটোপ্লে করা থাকে যাতে কষ্ট করে পরের ভিডিও ক্লিক করতে না হয় এবং ঘন্টার পর ঘণ্টা দরকারি অদরকারি ভিডিওর আবর্জনা গিলতেই থাকি।
  • প্রতিদিন অন্তত একটি পোস্ট না করলে আমাদের নিজেকে কেমন শূন্য শূন্য লাগে। কিছু বলার না থাকলে "একা একা লাগে" জাতীয় নারসিস্টিক স্ট্যাটাস আপডেট করে দেই পুরো দুনিয়ার কাছে।
এগুলো সবই মাত্রাতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়ার নেশার বহিঃপ্রকাশ।
এবার তাহলে দেখা যাক কিভাবে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলো আমাদের ক্ষতি করছে। এই প্লাটফর্মগুলো আমাদের অজ্ঞতার সুযোগে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে চলেছে, তাদের নতুন নতুন ফিচার ব্যবহারের জন্য আমাদেরকে প্রলুব্ধ করছে আর বাস্তব জীবনকে ক্রমাগত তাদের ভার্চুয়াল বাস্তবতা (যেমন মেটাভার্স ) দিয়ে প্রতিস্থাপন করছে। এভাবেই প্রতিটা মানুষকে আস্তে আস্তে ভেতর থেকে ধ্বংস করে দিচ্ছে এবং সমাজ কাঠামোকে ঝুকির সম্মুখিন করছে। এইসব ‌অসংখ্য ঝুঁকিগুলোর মধ্যে অল্প কিছু তুলে ধরা যাক—
  • মানুষ এখন অল্প সময়ে অনেক বেশি বিষয়বস্তুতু নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করতে পারে। স্বাভাবিক ভাবেই কোন একটা বিষয়ে ঠিক মতো মনোযোগ দিতে পারে না। তার উপর আছে “পরবর্তী দুর্দান্ত “ বিষয়ের প্রলোভন। সোশ্যাল মিডিয়া নামক নেশা এমন ভাবে তাদের প্লাটফর্মগুলোকে সাজায় যেন আমরা প্রতিটা পোষ্ট, ছবি , মীম অথবা ভিডিওর টোপগুলো একটার পর একটা গিলতেই থাকি।
  • ব্যবহারকারীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের জীবনের সাফল্যই সাধারনত বেশি শেয়ার করে। এখানে আমরা মূলত অন্যদের সেরা জিনিষটাই শুধু দেখি। তাদের সবচেয়ে আকর্শনীয় সেলফি, অসাধারন ভ্যাকেশন ডেস্টিনেসন, বিলাসবহুল খাবার, তাদের চাকরির পদোন্নতি, অ্যাওয়ার্ড, তাদের শতশত লাইক , কমেন্ট পাওয়া পোস্ট আমরা সারাক্ষন দেখছি, কল্পনা করুন যে আমার কয়েকশো বন্ধু আছে এবং আমি ক্রমাগত শুধু তাদের সাফল্যগাঁথাই দেখছি। এভাবে আমরা আমাদের জীবনের জন্য অবাস্তব এবং অসম্ভব সব লক্ষ্য স্থির করি। আমাদের মনে হয় যেন সব কিছুতে সেরা আর সর্বদা সুখী না হওয়া পর্যন্ত জীবনে সফলতা আসবে না। এভাবে আমাদের মধ্যে এক ধরনের মেন্টাল ট্রমা তৈরি হয় এবং আমরা কখনো আর কোন কিছুতেই সন্তষ্ট থাকতে পারি না।
  • সোশ্যাল মিডিয়ার এই ডিজাইনের ফলে আরও দুটি মনস্তাত্ত্বিক অক্ষমতা তৈরি হয়: মনোযোগ হারানো এবং মনোযোগ ধরে রাখার অক্ষমতা। মানুষের চোখের দৃষ্টি পেরিফেরাল (সীমান্তবর্তী বা পারিপার্শ্বিক) দেখায় সক্ষম।এটা আমাদের আশেপাশের জিনিস দেখতে সাহায্য করে এমনকি যখন আমরা সেটা উপর ফোকাস নাও করি। এর আসল কাজ হলো অপ্রত্যাশিত পারিপার্শ্বিক শত্রুর সম্মন্ধে সবসময় সজাগ রাখা। সোশ্যাল মিডিয়া টেকনোলজিস্টরা এটি খুব ভাল করেই জানেন এবং তারা প্রায়শই স্ক্রিনের জিনিসগুলিকে এমন জায়গায় বসাবে যে আমাদের মনোযোগে তা বিঘ্ন ঘটাবে যা তাদের ব্যবসার উপকারে আসবে। একবার আমাদের মস্তিষ্ক সেই ঘন ঘন বাধা-বিঘ্নে অভ্যস্ত হয়ে গেলে এটি আমাদের নিয়মিত আচরণে পরিণত হয়। এটি আমাদের স্বাভাবিক জ্ঞান অর্জন এবং জীবনের নির্মল শান্তির জন্য ধ্বংসাত্মক।
  • সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি আমাদের তথ্যের বন্যায় ভাসিয়ে দেয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে আর তার ফলাফল হলো আমরা বেশিরভাগ তথ্যের integrity বা সত্যতা যাচাই করার সময় পাইনা। তদুপরি, তারা প্রায়শই এটাকে এক ক্লিকে যেকোনো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এবং গ্রুপের সাথে শেয়ার করার জন্য সহজ করে তোলে। এটি শুরুতে তুচ্ছ মনে হতে পারে তবে এটি সমাজে একটি বিশাল প্রভাব ফেলে। আর আমরা যারা মুসলিম, আমাদেরকে কোরানে বলা হয়েছে দায়িত্বশীলভাবে সব কিছু যাচাই করতে এবং “সত্য” তথ্য ছাড়া আর কিছুই প্রচার না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। (কুরআন ৪৯:৬ এবং ২৪:১৫)
  • সবচেয়ে পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ করা হয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, এটা কি এমন বড় ব্যাপার? আমরাতো সংবাদপত্র, টিভি বা বিলবোর্ড বিজ্ঞাপনে আগে থেকেই অভ্যস্ত। হ্যাঁ, ওগুলোরও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিন্তু এটা ঘূর্ণিঝড়ের সাথে বৃষ্টির ফোঁটা তুলনা করার মতো। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এ.আই. এলগরিদমগুলি আমাদের টার্গেট করতে এবং আকৃষ্ট করতে আমাদের ব্যক্তিগত ডেটা এবং স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহারের প্যাটার্ন ব্যবহার করে যেখানে তারা আমাদেরকেই বতাদের পণ্যে পরিণত করে। এটি আমাদের একের পর এক "আকর্ষণীয়" পোস্ট দেখিয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য স্ক্রিনে আটকে রাখে যা তাদের বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করা যায়। বস্তুবাদের (materialistic life) যে ক্ষতিকরাক প্রভাব সেটা পরবর্তীতে কোনো এক সময়ে আলোচনা করা যেতে পারে। আপাতত সংক্ষেপে এটুকু বলা যায় যে, এই বস্তুবাদ আমাদের ভাবতে বাধ্য করে যে আমাদের "অবশ্যই" তাদের বিজ্ঞাপীত পন্যগুলো এখনই প্রয়োজন এবং সেইজন্য আমাদের জীবনটাকে এক "ইঁদুর দৌড়ের" মধ্য ফেলে দেয়।
  • আমাদের সমাজে সোশ্যাল মিডিয়ার আরেকটা সূক্ষ্ম কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রভাব হলো: মানসিক অসাড়তা তৈরি হওয়া। বারবার চাঞ্চল্যকর ছবি এবং সংবাদ দেখতে থাকলে সেটা আমাদের ইন্দ্রিয়কে অসাড় করে দিতে পারে। আমরা যদি মানুষের দুঃখ-কষ্ট আর অন্যায়-অনাচার শুধু স্মার্টফোনের পর্দাতেই দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি আর কার্যত বাস্তব জীবনে কিছুই না করি, তাহলে সবধরনের অন্যায়, ভোগান্তি এবং অপরাধের বিরুদ্ধে ক্রমান্নয়ে আমাদের মনুষ্যত্ব অসাড় হয়ে যায়।
অথচ যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারলে, এই সোশ্যাল মিডিয়াও হয়ে উঠতে পারে অব্যর্থ হাতিয়ার। তাহলে কিভাবে আমরা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে উপকৃত হবো? এটা ততোক্ষন পর্যন্ত সম্ভব না যতক্ষন না আমরা তাদের বিজনেস মডেলকে Attention Economic মডেলকে পরিবর্তন করাতে না পারি। এর জন্য প্রথম পদক্ষেপ আমাদের নিজেদেরই নিতে হবে। তাদের বিজনেস মডেলের শিকার না হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারে আমাদেরকে নিজেদের নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্টা করতে হবে। আমাদেরকে ওগুলোর চারপাশে একটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে যা আমাদেরকে ওইসব ক্ষতির থেকে রক্ষা করবে। সে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গুলো কী হতে পারে?
এখানে কিছু কার্যকরী ব্যবস্থার উদাহারন দেয়া হলো যেগুলোর মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারি। আমাদের সামাজিক মিডিয়া ব্যবহারের লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে কিছু লক্ষ্যের কথা বলা যায়:
  • ভৌগলিক দূরত্বের পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করা, এর মার্কেটপ্লেসগুলোতে ব্যবহার করা, রাজনৈতিক সক্রিয়তা এবং সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান চালানো, ইত্যাদি। মাঝে মাঝেই পরখ করে দেখতে হবে যে আমরা এই প্ল্যাটফর্মগুলিকে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার জন্য শুধু ব্যবহার করছি কিনা। আমরা যদি নিজেকে সেই লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যেতে দেখি, তাহলে অবিলম্বে ঠিক “রাস্থায়” ফিরে আসতে হবে।
  • এই পৃথিবীতে সবচেয়ে অমুল্য সম্পদ হলো সময়। এই সম্পদকে ব্যবহার করতে হবে বুদ্ধিমত্তার সাথে এবং চরম সতর্কতার সাথে। সময়ের সঠিক ব্যবহার জীবনের সাফল্য বা ব্যর্থতার দিক নির্দেশক। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের জন্য দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় আলাদা করে রাখতে হবে। প্রতিদিনের পরিবর্তে সপ্তাহে নির্দিষ্ট কয়েক দিন আলাদা করলে আরও ভাল। একবার সময় ঠিক নির্দিষ্ট করার পর সেটাকে ধরে রাখতে হবে।
  • যদি বাচ্চাদের লেখাপড়া বা বিনোদনের জন্য ইউটিউব আথবা অন্য সোশ্যাল মিডিয়াগুলো ব্যবহার করতে হয়, তাহলে তাদের ঘরের খোলা জায়গায় এটি ব্যবহার করতে দিবেন যেখানে পরিবারের অন্য সদস্যরা তাদেরকে অতিরিক্ত ব্যবহারের কথা মনে করিয়ে দিতে পারে।
  • খবর শেয়ারে আমাদেরকে অত্যন্ত যত্নবান হতে হবে। একজন মুসলিম হিসেবে, আল্লাহর সুস্পষ্ঠ নির্দেশনা আছে যে, মানুষের ক্ষতি এড়াতে শেয়ার করার আগে তথ্যদাতা এবং তথ্য যাচাই করতে হবে (কুরআন ৪৯:৬ এবং ২৪:১৫)। কিভাবে এটা নিশ্চিত করবেন? Triangulation method মানে ত্রিভুজিকরন কৌশল ব্যবহার করতে পারেন।আপনার আগ্রহের অন্যান্য মৌলিক বিষয়গুলি জানুন, যেমন সামাজিক বিজ্ঞান, ভূগোল, রাজনীতি, অর্থনীতি, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান , গণিত ইত্যাদি। গুগল ব্যাবহার করে তথ্য যাচাই করা যায়: এটি লেখা অথবা ছবি হোক, গুগলে এর সবই করা যায়। ক্রস চেক করার জন্য কমপক্ষে তিনটি উৎস ব্যবহার করে ত্রিভুজিকরন প্রয়োগ করতে হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- কোনো স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য যাচাই করতে একটা আমেরিকান উৎস (www.cdc.gov), একটা আন্তর্জাতিক উৎস (www.who.int), আর কিছু এশিয়ান/আফ্রিকান/ইউরোপীয় উৎস ব্যবহার।
সোশ্যাল মিডিয়ার সর্বজনীনতা আমাদের কাছে এক অসাধারণ সুযোগ করে দিয়েছে আর তার সাথে সাথে এটি মানব সমাজের ভারসাম্যকে এক ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে। এখন আমাদের সামনে প্রশ্ন হলো - আমরা কি নিজেদেরকে ব্যবহৃত হতে দিবো কিছু লোভী প্রযুক্তিবিদদের কাছে যাতে তারা আমাদের অজ্ঞতা থেকে লাভবান হতে পারে নাকি আমরা নিজেদের প্রস্তুত করবো সোশ্যাল মিডিয়ার আসল ব্যবসার মডেলকে বুঝতে আর সর্বোপোরি এর থেকে আমাদেরকে লাভবান করতে!
আমাদেরকেই এর মধ্যে থেকে যেকোনো একটা বেছে নিতে হবে। আমাদের জন্য আর আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য।

No comments:

Post a Comment